শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিরপুরের ৩০ কোম্পানির বাসে ই-টিকিটিং শুরু রোববার

অনলাইন ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, নভেম্বর ১২, ২০২২

মিরপুরের ৩০ কোম্পানির বাসে ই-টিকিটিং শুরু রোববার
রাজধানীর মিরপুরের ৩০টি কোম্পানির বাস রোববার (১৩ নভেম্বর) থেকে ই-টিকিটিংয়ের আওতায় আসছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।

শনিবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আয়োজিত ‘রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু’ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা শহরে চলাচলকারী ৬০ কোম্পানির বাস এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা ও ঢাকা শহরতলীর ৯৭ কোম্পানির বাস ই-টিকিটিংয়ের আওতায় চলাচল করবে।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ পেয়ে আসছি। সেগুলো দূর করার জন্য ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কাজ করে আসছে। বর্তমানে ঢাকা শহর এবং শহরতলীতে মোট ৯৭টি বাস কোম্পানি বাস পরিচালনা করে। তাদের নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় সভা করেছি। বিভিন্ন সময় মোট ২১টি সার্কুলার দিয়েছি। ৯টি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করে রাস্তায় মাসের পর মাস ডিউটি করিয়েছি এবং আমি নিজেও মাঠে ছিলাম দীর্ঘসময়। বিশেষ করে অতিরিক্ত ভাড়া বিষয়টি আমরা বিগত দিনে সমাধান করতে পারিনি। দীর্ঘসময় পরে আমরা গেট লক সার্ভিস, সিটিং সার্ভিস— এগুলো আমরা বন্ধ করতে পেরেছি। কিন্তু তারপরও অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়টি আমাদের অভিযোগে বারবার আসছিল।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু করা হয়। ওই সময় মিরপুরের আটটি বাস কোম্পানিতে প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করা হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে যাওয়ার পর দেখা গেল মালিকরা ইনকাম সঠিকভাবে পাচ্ছি না। একদম কমে গেছে। তাদের অনেকে বাস চালাতে আগ্রহী হলো না। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলে ই-টিকিটিং মেশিন বাসের ভেতরে দেওয়া হলো। পরীক্ষামূলকভাবে সেই কাজটি করায় দেখা গেছে আগের চেয়ে ফলাফল অনেক ভালো এসেছে। এতে করে মালিকদের ইনকাম বেড়েছে। আগে গাড়িতে দুই জন কর্মী থাকলেও এখন সেখানে তিনজন কর্মীর প্রয়োজন হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন চালক, হেলপার এবং কন্ট্রাক্টর।

খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আমরা একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছি ই-টিকিটিংয়ের জন্য। দুজন কর্মকর্তা এটি সমন্বয় করবেন। এর জন্য আমরা একটি হটলাইন তৈরি করেছি যেখানে তিনটি নম্বর রয়েছে। নম্বরগুলো হচ্ছে— ০১৬১৮৯৩৩৫৩১, ০১৬১৮৯৩৬১৮৫ এবং ০১৮৭০১৪৬৪২২। সমিতির পক্ষ থেকে আট জনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যারা পুরো ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে বিষয়টি দেখবেন। পাশাপাশি কয়েকটি কোম্পানির পক্ষ থেকে তারাও স্পেশাল চেকার রাখবেন।

তিনি বলেন, আগামীকাল রোববার থেকে মিরপুরের ৩০টি কোম্পানিকে আমরা এই টিকিটিংয়ের আওতায় নিয়ে আসছি। এর জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মিরপুর মালিক সমিতির সেন্ট্রাল কমিটির মাধ্যমে সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ঢাকা শহরের মধ্যে চলাচলকারী সব কোম্পানির বাসকে ই-টিকিটিংয়ের আওতায় আনব। এছাড়া আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকা শহরতলীতে (গাজীপুর, সাভার, নবীনগর, ধামরাই, মুন্সিগঞ্জ) চলাচলকারী ৩৭টি বাসকেও ই-টিকিটিংয়ের আওতায় আনা হবে। সুতরাং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ঢাকা শহর এবং শহরতলীতে চলাচলকারী সব বাস ই-টিকিটিংয়ের আওতায় আসবে। ঢাকা শহর এবং শহরতলীতে চলাচলকারী মোট বাসের সংখ্যা হচ্ছে ৫ হাজার ৬৫০টি। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে চলে ৩ হাজার ১১৪টি এবং শহরতলীতে চলে ২ হাজার ৩৩৬টি।

ই-টিকিটিং চালু হলে ঢাকা শহরের মধ্যে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে যে অসম প্রতিযোগিতা থাকত সেগুলো বন্ধ হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব বলেন, ই-টিকিটিং চালু হলে অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে। কারণ চালকদের বেতন নির্ধারণ করা দেওয়া থাকবে। ই-টিকিটিংয়ের জন্য বর্তমান থেকে আরও অনেক টাকা বেশি বেতন নির্ধারণ করে তাদের দেওয়া হচ্ছে।

ই-টিকিট চালু হলে গাড়ির সংখ্যা কমে যায়, যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ে— এ বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, এই অভিযোগ একেবারেই সঠিক। শুরুর দিকে যখন আমরা ই-টিকিটিং রাস্তায় দেওয়া শুরু করেছি তখন মালিকরা ইনকাম ঠিক মতো পেত না। যার ফলে মালিকরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে উৎসাহী ছিল না। পরে আমরা সাধারণ মালিকদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাসের ভেতরে ই-টিকিটিং মেশিনটি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।

আপনারা তো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামীকাল মিরপুরে ই-টিকিটিং চালু করবেন, এরপরও যদি বাস মালিকরা বাস চালাতে আগ্রহী না হয় সেক্ষেত্রে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আগামীকাল (রোববার) থেকে যে কোম্পানিগুলোকে ই-টিকিটিংয়ের আওতায় আনছি তাদের মালিকদের সঙ্গে কথা বলেই আনছি এবং তারা রাজি হয়েছেন। তারপরও না মানলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তাদের অবশ্যই ই-টিকিটিংয়ের আওতায় আনা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ই-টিকিটিং সফল হলে আমরা বাসে পাঞ্চ কার্ডের ব্যবস্থা করব ভবিষ্যতে।
0 Comments