শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারায়ণগঞ্জ থেকে উধাও ওসমান পরিবার

অনলাইন ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ থেকে উধাও ওসমান পরিবার
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া রাইফেলস ক্লাব ছিল শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদের আখড়া। রাইফেলস ক্লাবকে ব্যবহার করা হতো শামীম ওসমানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মতো। বিভিন্ন বিচার সালিশ, বৈঠক, সভা সবই হতো এখানে। পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে দমনে এ ক্লাবে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হতো। নানা অপকর্মের নির্দেশও দেওয়া হতো এখান থেকেই।

নারায়ণগঞ্জ থেকে বিলুপ্ত নসিব পরিবহনের মালিকরা সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘রাইফেলস ক্লাবে ডেকে নিয়ে নসিব পরিবহনে নতুন এমডি বসানোর জন্য চাপ দিয়েছিলেন শামীম ওসমান এমপি হওয়ার আগেই। আর এমপি হওয়ার পর এই বাসের পুরো ব্যবসাই দখল করে নেয় শামীম ওসমানের লোকজন।’ এমন অসংখ্য অত্যাচার-নির্যাতনের কাণ্ডের জেরে এই ক্লাবের প্রতিও সৃষ্টি হয় জনক্ষোভ। তাই সরকার পতনের একদিন আগে আগুন দেওয়া হয় ক্লাবটিতে।

সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্র সংসদও ছিল শামীম ওসমানের মদদপুষ্ট টর্চার সেল। সাধারণ শিক্ষার্থী, ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী তো বটেই, সাংবাদিকদেরও এ টর্চার সেলে এনে নির্যাতন করা হতো। ছাত্র সংসদের কক্ষ দখল করে সেখানে নির্যাতন চালাত স্বঘোষিত ভিপি ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শামীম-অনুসারী হাবিবুর রহমান রিয়াদ। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এখানে মারধর করা হয় একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধি সৌরভ হোসেন সিয়ামকেও। ৫ আগস্ট এই টর্চার সেলও গুঁড়িয়ে দেয় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আল্লামা ইকবাল রোডে শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলের কথা বিভিন্ন সময় উঠে আসে গণমাধ্যমে। উইনার ফ্যাশন নামক একটি কারখানায় ছিল তার টর্চার সেল। অভিযোগ আছে, এখানে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ত্বকীকে। টর্চার সেল থেকে ত্বকীর রক্তমাখা প্যান্ট উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ঘটনার পর আজমেরী তার টর্চার সেল সরিয়ে নেয় নিজ বাসার নিচতলায়।

ওসমান পরিবারের রোষাণলে মারাত্মক মাশুল দিতে হয়েছে ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বীকে। বিভিন্ন সময় ওসমান পরিবারের সদস্যদের চাঁদাবাজি, দখলবাজি, ভূমিদস্যুতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তিনি। এর জেরেই খুন হতে হয়েছে ত্বকীকে। ২০১৩ সালে অপহরণের পর বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে ত্বকীর লাশ ফেলা হয় শীতলক্ষ্যা নদীতে।

রফিউর রাব্বি আমাদের সময়কে বলেন, ওসমান পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন সময় নানা রকম জুলুম নির্যাতন করেছে। হত্যা, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যেখানে ওসমান পরিবার ছিল না। তাদের সরাসরি আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি সংসদে দাঁড়িয়েও সরাসরি ওসমান পরিবারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তারই প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত পর্যন্ত বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, আমরা চাই না ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের মতো আর কোনো মাফিয়া তৈরি হোক।

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম আমাদের সময়কে বলেন, ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলায় আমার বাসায় গভীর রাতে বোমা হামলা করা হয়। তারা নারায়ণগঞ্জ শহরে এমন কোনো খাত নেই যেখানে চাঁদাবাজি করেনি। নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সাবেক সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল ছিল এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক। রাইফেলস ক্লাব ছিল চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র। এখানে বসেই নারায়ণগঞ্জের পরিবহন, সুতা ব্যবসা, ফুটপাতের চাঁদাবাজি, গার্মেন্টস সেক্টরে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা হতো। আর জমি দখলের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করত শামীমের আরেক সেনাপতি শাহ নিজাম। তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, প্রশাসন কখনো তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নারায়ণগঞ্জে নতুন করে আর কোনো গডফাদারের উদয় হোক এটা চান না বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
0 Comments