বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিরিজ বৈঠকের পর রাজনীতিতে উত্তেজনা কমেছে, অনিশ্চয়তা কাটেনি

অনলাইন ডেস্ক | আপডেট: সোমবার, মে ২৬, ২০২৫

সিরিজ বৈঠকের পর রাজনীতিতে উত্তেজনা কমেছে, অনিশ্চয়তা কাটেনি

পরও নির্বাচনের রোডম্যাপ না হলে সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার এবং আন্দোলনের পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। আন্দোলনে জনসমর্থন ছাড়াও বন্ধু রাষ্ট্রসহ অন্যান্য শুভ শক্তির সমর্থন আদায়ে তৎপরতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছিল স্থায়ী কমিটিতে। তার পরই নতুন এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।

সংস্কারে জামায়াতের আরও জোর

গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সরকারের মূল লক্ষ্য। কিন্তু প্রশাসনসহ সব প্রতিষ্ঠান কুক্ষিগত হয়ে যাওয়ায় ভোট নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, যা অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে। ড. ইউনূস বলেন, এই দায় তিনি নিতে চান না।

একাধিক উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসনের ৮০ ভাগ কর্মকর্তা বিএনপিপন্থি। নির্বাচন কমিশনও বিএনপির পক্ষে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে বিএনপি একচেটিয়া সমর্থন পাবে।

সরকারের দিক থেকে এ বক্তব্য আসার পর জামায়াতও বলছে, এ পরিস্থিতিতে সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

গত শনিবার জামায়াতের মজলিসে শূরার বৈঠকে আলোচনা হয়– রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সরকারের উচিত কোন মাসে নির্বাচন হবে, তা স্পষ্ট করা। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান শনিবার যমুনায় বৈঠকের পর বলেন, ‘অর্থবহ কিছু সংস্কার এবং বিচার হতে হবে। এর মাধ্যমে অর্থবহ নির্বাচন হবে। লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড থাকবে। কাউকে ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হবে না। পেশাশক্তি, কালো টাকার ব্যবহার থাকবে না। এটাই মানুষের দাবি।’
জামায়াতের একাধিক নেতা সমকালকে বলেছেন, আওয়ামী লীগবিহীন নির্বাচনে জামায়াতই বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই আগামী নির্বাচনে দলটির ভালো করার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ভালো ভোট হতে হবে।

দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, জামায়াতের দাবি স্পষ্ট, নির্বাচন ও সংস্কারের রোডম্যাপ হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশও তৈরি করতে হবে।

এনসিপির দাবি বাড়ছে

অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল এনসিপি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর নিজেদের অবস্থানে অনড় হয়েছে। দলটি বিচার-সংস্কার-নির্বাচনের সমন্বিত রোডম্যাপ চাইলেও সংসদের আগে স্থানীয় সরকারের ভোট, ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগ আমলের সব নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করার দাবি জুড়ে দিয়েছে।

এসব দাবি নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েছে এনসিপি। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা গতকাল চট্টগ্রামে ৯টি পথসভা করেছেন। আগামী ১৫ সপ্তাহে জেলা-উপজেলা কমিটি গঠন করে ছয় দাবি নিয়ে তৃণমূলে যাবে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সমকালকে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন বিএনপির বর্ধিতাংশে পরিণত হয়েছে। তারা কেমন কাজ করে, তা প্রমাণেও আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে।

নির্বাচনের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জোর দিচ্ছে এনসিপি।

এনসিপির আওয়ামী লীগ আমলের সব নির্বাচন অবৈধ ঘোষণার দাবি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে শপথের জন্য আন্দোলনে থাকা ইশরাক হোসেনকে টার্গেট করে তারা এই দাবি তুলেছেন। মূলত ইশরাকের এই আন্দোলন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। বিএনপি এখন দুই ছাত্র উপদেষ্টাসহ তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইছে। আর এনসিপি আওয়ামী লীগ আমলের নির্বাচন অবৈধ ঘোষণার দাবি সামনে এনে মূলত দক্ষিণ সিটির নির্বাচনকেই স্বীকার করতে চাচ্ছে না।

0 Comments