একদিন সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে তা আমরা সবাই জানি। জন্ম নেওয়ার পর থেকেই আমরা একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হই। কিন্তু মৃত্যুর ঠিক আগে বা পরে আমাদের কী হয় তা আমাদের সবারই অজানা।
মৃত্যুর পর কী হবে তা বলা না গেলেও মৃত্যুর ঠিক আগে কী ঘটে তা নাকি এখন বলা সম্ভব। সম্প্রতি কানাডার এক দল গবেষক এমনটাই দাবি করছেন। তাদের গবেষণাপত্র ‘ফ্রনটিয়ার ইন এজিং নিউরোসাইন্স’ এ উঠে এসেছে এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এ গবেষণায় ৮৭ বছরের এক প্রবীণ যিনি এপিলেপসিতে আক্রান্ত ছিলেন তার নিউরোলজিক্যাল রেকর্ডিং করা হয়। রেকর্ডিংয়ের সময়ই হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে দেখা যায় তার মস্তিস্ক এমনভাবে কাজ করছিল যেন তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন বা স্মৃতি মনে করছিলেন।
তবে গবেষকদের মধ্যে অন্যতম সদস্য ডা. আজমল জিম্মার জানান, তাদের ওই ব্যক্তির মৃত্যুর আগের মুহূর্তের নিউরোলজিক্যাল রেকর্ডিং সংগ্রহের কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। আকস্মিকভাবেই এ তথ্য হাতে পান তারা।
মৃত্যুর আগের মুহূর্তে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সম্পর্কিত এ গবেষণায় গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, মানুষের মৃত্যুর ঠিক আগে সারা জীবনের যাবতীয় সঞ্চিত স্মৃতির এক ঝলক ভেসে ওঠে চোখের সামনে।
তবে কি মৃত্যুর আগের ৩০ সেকেন্ডে যাদের মানুষ ভালোবাসেন তাদের স্মৃতি ফুটে ওঠে? এ প্রশ্নের জবাবে জিম্মার বলেন, এই বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা অসম্ভব। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষই স্বতন্ত্র চিন্তার অধিকারী।
তাই মৃত্যুর সময় মানুষ কী ভাবে তা একান্তই ওই ব্যক্তি ও আশপাশের পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ মৃত্যুর আগে তার সুখকর আর প্রিয় মানুষদের কথাই মনে করে। দর্শনতত্ত্ব অনুযায়ী যদি আমি মৃত্যুর আগে কোনো স্মৃতি প্রত্যক্ষ করি সেক্ষেত্রে খারাপ স্মৃতির থেকে ভালো স্মৃতিই আগে মনে পড়বে।
চিকিৎসা শাস্ত্রে, হৃদস্পন্দন থামার পর মস্তিস্ক বিকল হলে সেই অবস্থাকে মৃত বলে আখ্যায়িত করা হয়। এ মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে কী ঘটে তা জানার জন্য ২০১৩ সালে আমেরিকার একদল গবেষক ইঁদুরের ওপর একটি গবেষণা করেন।
যেখানে গবেষকরা লক্ষ্য করেন, ইঁদুরের মৃত্যুর আগের ৩০ সেকেন্ডে কিছু অস্বাভাবিক ব্রেন ওয়েব। এ একই ধরনের অস্বাভাবিক ব্রেন ওয়েভ কানাডার গবেষকরাও মানুষের মধ্যে লক্ষ্য করেছে। তাই মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে সকল জীবের ক্ষেত্রেই রহস্যজনক কিছু অনুভূতি কাজ করে যা ভাষায় প্রকাশ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
সূত্র: এই সময়