বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এগিয়ে যাক দেশ, এগিয়ে যাক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪

এগিয়ে যাক দেশ, এগিয়ে যাক ড. মুহাম্মদ ইউনূস
বিশেষ সম্পাদকীয়ঃ
দেশ এখন কোন পথে। দর্শকের গ্যালারি থেকে বোদ্ধরা এমনই জল্পনা কল্পনা করছেন প্রতিনিয়ত। অনেকেরই মতে  দেশের এখনকার জার্নিটি নিঃসন্দেহে ভালো। ছাত্র জনতার আন্দোলনে যে পরিবর্তন এসেছে নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনুস কে আমরা সাধুবাদ জানাই। তার জন্য রয়েছে জাতির অফুরন্ত সম্মান, ভালবাসা। দেশ ও জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী নিশ্চয়ই তিনি এ জাতিকে নতুন পথ দেখাবেন। একটি নতুন সকাল উপহার দেবেন আমজনতাকে। সব সময় মনে রাখতে চাই এই ছাত্র জনতার গণ বিপ্লবে যারা জীবন দিয়েছেন এবং আহত হয়ে পরিবার ও সমাজের কাছে বোঝা হয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তাদের ক্ষতিকে কোনভাবেই পুষিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। তবু তাদের পাশে থেকে আমরা সকল প্রকার সহযোগিতা করতে পারি এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার । এমন মন্তব্য সুশীল সমাজের মানুষের। আমরা তার সাথে একমত। 

তবে সাধু সাবধান। ভালোর মাঝে কিছু মন্দ অনুপ্রবেশ না করে। সে বিষয়ে সজাগ  থাকতে হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ডক্টর ইউনূস দেশের শুধু  নয় গোটা বিশ্বের এক বিরল সম্মানের নাম।সারা বিশ্বে  সে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান । ছোট্ট একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে যেমন,  জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে নিউইয়র্কে যাবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ২২-২৭ সেপ্টেম্বর এ সফর করবেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্যে রয়েছেন- ড. ইউনূসের মেয়ে দিনা আফরোজ ইউনূস, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব শাব্বীর আহমদ, বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার বড় বহর নিয়ে সফর করলেও এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সবচেয়ে ছোট দল নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই হবে তার প্রথম বিদেশ সফর।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশন আগামী ১০ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ আলোচনা শুরু হবে ২৪ সেপ্টেম্বর। আর সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারণে বৈশ্বিক সুশাসনে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে আগামী ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর 'সামিট অব দ্য ফিউচার'-এ যোগ দেওয়া র কথা রয়েছে শীর্ষ নেতাদের।

গত বছর এই অধিবেশনে যোগ দিন বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২১৭ জন! রাষ্ট্র প্রধানের সাথে এই সফর সঙ্গীদের স্পেশাল বিমানে যাওয়া-আসা, সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিমান স্টান্ড  বাই সেই দেশের এয়ারপোর্টের পার্কিং এ অবস্থান করা। ফাইভ স্টার হোটেলে থাকা-খাওয়া দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হতো।সফর সঙ্গীদের পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা ছিল আমাদের দেশে এক ধরনের ফেক আভিজাত্য।  অতীতে  বিভিন্ন সময় এ ধরনের ঘটনার ব্যাত্যয় ঘটেনি । অথচ ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর এবার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। নিশ্চয়ই এটি ইতিহাসের পাতায়  স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। নোবেল বিজয়ী এই মানুষটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ছাত্র আমজনতা দেশ গড়ার কাজে তার পাশে থাকবেন এমনটিই মনে করা হচ্ছে। 

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে দেশ চলছিল খুড়িয়ে খুড়িয়ে।  খোলসের আবরণে।খোদ আওয়ামী লীগের অনেক উদারপন্থী বুদ্ধিজীবী মহল এর বিরোধিতা করেও তারা টিকতে পারিনি।তাদের মত প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি।  তাদের কোন পরামর্শ নেওয়া হয়নি।  অর্থনীতি  সামাজিক নিরাপত্তা রাজনৈতিক মত প্রকাশ তথা মৌলিক ও নিকট মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি ক্লান্তিকাল অতিক্রম করছিল এদেশের মানুষ। ছাত্র জনতার গণ বিপ্লবের পর মাত্র একমাস ১১ দিনে ডঃ মোঃ ইউনুস দেশের সংকটময় মুহূর্তে যেভাবে হাল ধরেছেন, বিভিন্ন সমস্যার যে বাস্তব মুখী মোকাবেলা করছেন তা নিঃসন্দেহে চোখে পড়ার মতো। তার চাওয়া পাওয়া এদেশের মানুষকে ঘিরেই।তিনি চাইছেন এদেশে কোন দুর্নীতি থাকবে না কোন বৈষম্য থাকবে না। এমন একটি নিট এন্ড ক্লিন  বাংলাদেশ। 

তবে সবকিছুর জন্য চাই সমন্বিত সহযোগিতার প্রয়াস। যেমন বড় বড় রাজনৈতিক দল মুখে যা বলছে বাস্তবে তার সঠিক প্রতিফলন কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এমন অভিযোগ কিন্তু তৃণমূলের সাধারণ মানুষের। দেশে এখনো চলছে চাঁদাবাজি দখলদারিত্ব লুটপাট খুন খারাবি হানাহানি। এ সকল নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে আসলে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। সারাদেশে পুলিশ কিন্তু এখনো কুম্ভ ঘুমে বলা যায়। পুলিশের যে দায়িত্ব ন্যায় অন্যায়ের বিভেদ মূলে ব্যবস্থা গ্রহণ তা কিন্তু হচ্ছে না। 

পত্রিকার পাতায় একটি খবর চোখে পড়ল। খবরটি দেখে খোঁজখবর নেয়া শুরু করলাম সংশ্লিষ্ট এলাকায়। ডেট লাইন সাতক্ষীরা কালীগন্জ।পারিবারিক কারণে একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।পরিবারের সদস্যারা এবার দারস্হ হলেন স্থানীয় চেয়ারম্যান উপজেলা চেয়ারম্যান,আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ  স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে। যাতে কোন ভাবেই আত্মহত্যা মামলাটি রুজু না হয় এবং পোস্ট মর্টেম না হয়। স্হানীয় নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মানবিক ভেবে স্হানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে সুপারিশ করেন।  কাজও হলো সেই মতো। কিন্তু দুই বছর পর দেশের এই পট পরিবর্তনের সুযোগে স্বার্থন্বেষী মহলটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জাতীয় সংসদ সদস্য এবং কিছু সাধারন মানুষকে আসামি করে আাদালতে মামলা করলো।বিজ্ঞ আদলত  মহলটির অসৎ উদ্দেশ্য ও কারসাজি বুঝতে পেরে মামলাটি খারিজ করে দেন। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি তারা। মহলটি অন্য প্রচেষ্টাও চালিয়েছিল। কিন্তু অন্যায় কাজটি তারা কোনভাবেই সফল হতে পারেনি।  এ ধরনের ফাঁদ চলছে সারা দেশ জুড়ে। আমাদের মনে হয় ডিসি এস পি ইউএনও ওসি  এদেরকে  তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। সরকারিভাবে ও তাদেরকে কাজ বুঝে দিতে হবে দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে। তাদের কাজ হবে নিরপেক্ষভাবে দুষ্টের দমন আর সৃষ্টের পালন করা। 

এই কুচক্রী মহলটি অন্যায় ভাবে যেন কারো নামে মিথ্যা মামলা দিতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনকে ভীষণভাবে সজাগ থাকতে হবে।  আর যারা অন্যায় ভাবে মামলা দিতে আসবে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা হওয়া উচিত। যাতে অন্যরা শিক্ষা পায়। যার নির্দেশনাও দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু  তা অনেকে স্থানে কার্যকর হচ্ছে না। 

 বলাবাহুল্য সারা দেশে  পুলিশের এখন কিন্তু বিশেষ কোনো অ্যাক্টিভিটিজ নেই। পুলিশ বিভিন্ন স্হানে এখনো কিছুটা নির্বিকার। পুলিশকে ন্যায় সঙ্গতভাবে একটিভ হতে হবে।

প্রসঙ্গত মনে পড়ে যায় ভারতের একসময়ের রাষ্ট্রপতি ও পরমানু বিজ্ঞানী এ,পি,জে,আব্দুল কালাম একবার রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশ গিয়েছিলেন। রাষ্ট্র থেকে তাকে মোট অংকের একটা সম্মাননা দেয়া হল। তিনি মাত্র ১০ ডলার রেখে বাকি অর্থ রাষ্ট্রীয় শাগারে ফেরত দিলেন। তিনি বললেন আমি সরকারি খরচে বিদেশে যাওয়া আসা থাকা খাওয়ার সকল ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আমি কি করব। এর কোন প্রয়োজন নেই। এটি আমাদের শিক্ষা। আর আমাদের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস জাতিসংঘ সফরের জন্য দুই তিনশ লোকের বহর নেন নাই। নিচ্ছেন না।তার সফর সঙ্গী রয়েছেন মাত্র সাত জন। এটি নিঃসন্দেহে একটি দৃষ্টান্ত আমাদের দেশের জন্য। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে রাষ্ট্র সংস্কারে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। ধৈর্যের সাথে সে সময় আমাদের তাকে দিতে হবে। 
বিভিন্ন পত্রপত্রিকা তথ্য অনুযায়ী জানা যায় ছাত্র জনতা একটি নতুন দল গঠন করতে ইচ্ছুক। একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্র জনতা নতুন দল গঠন করে যদি নতুন ভালো কিছু উপহার দিতে চায় তাহলে আমাদের কেন গাত্রদাহ হবে। এই গাত্রদাহের কারণ কি?  এই গাত্রদাহ কিসের আলামত?? 

সর্বোপরি একটাই কথা নতুন এই সমাজ বিনির্মাণে দেশ বিনির্মানে অহেতুক দখল লুটতরাজ হানাহানি কাটাকাটি কিংবা মিথ্যা মামলার মাধ্যমে মানুষ যাতে হয়রানি না হয়। অর্জিত সুনাম যেন নষ্ট না হয়। অতি উৎসাহী এবং সুবিধাবাদীদের কারণে যেন বর্তমান  অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইমেজ যেন  সংকটে না পড়ে। এজন্যই সাধু সাবধান।

বিশ্ববরেণ্য নোবেল বিজয়ী ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস তিনি যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন তা বাস্তবায়িত হোক। তার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। পাশাপাশি এই সরকারের সকল উপদেষ্টাদেরও উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ এগিয়ে যাক নতুনভাবে। মাথা উঁচু করে দাঁড়াক পৃথিবীর বুকে এমন প্রত্যাশাই রইল।
0 Comments