শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন কর্মকর্তা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্তে পিবিআই

অনলাইন ডেস্ক | আপডেট: সোমবার, অক্টোবর ১৪, ২০২৪

বন কর্মকর্তা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্তে পিবিআই
স্বপ্নীল হকঃ
সুন্দরবনের জেলেদের নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের নলীয়ান ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা তানজিলুর রহমান, ভোমরখালী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম, বনকর্মী মনিরুজ্জামান ও তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়েছে। 
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী হিসেবে মামলার আরজিতে দশজন সাক্ষীর নামও উলে­খ করা হয়েছে। এ ছাড়া চাঁদার টাকা কম দেয়ায় জেলেদের ধরা মাছ আত্মসাৎ ও মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলার আরজিতে। গত মঙ্গলবার কয়রা উপজেলার ৪ নম্বর কয়রা গ্রামের মোঃ আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী প্রথম কুমার মন্ডল। তিনি বলেন, আদালতের বিচারক মোঃ আজহারুল ইসলাম বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) খুলনা ইউনিটকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। 
মামলার আরজিতে উলে­খ করা হয়, বনবিভাগের অনুমতিপত্র নিয়ে সুন্দরবনের গেওয়াখালী এলাকার নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন কয়রার ৬ জন জেলে। তারা হলেন, উপজেলার ৪ নং কয়রা গ্রামের জেলে জাহাঙ্গীর আলম, মিঠুন সরদার, পল­ীমঙ্গল গ্রামের আবুল হোসেন, কাজল গাজী, মাছুম বিল­াহ ও বাদশাহ সরদার। গত ৫ সেপ্টেম্বর জেলেদের মাছ শিকারের সময় পার্শ্ববর্তী হংসরাজ নদী দিয়ে টহলকালে ভোমরখালী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাকিম ও বনকর্মী মনিরুজ্জামান জেলেদের ডাক দিয়ে তাদের সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র দেখাতে বলেন। 
মামলার আরজিতে আরও বলা হয়, অনুমতিপত্র সঠিক আছে দেখেও অহেতুক হয়রানি করার জন্য বনকর্মীরা বলতে থাকেন, ‘তোরা প্রবেশ নিষিদ্ধ অভয়ারণ্যে অবৈধভাবে মাছ ধরিস, তোদেরকে আজ আমরা মামলা দিয়ে জব্দ করে ছাড়বো’। এক পর্যায়ে বনকর্মী মনিরুজ্জামান ও তার সাথে থাকা আরেক বনকর্মী তরিকুল ইসলাম জেলেদের হুমকি ধামকি দিতে দিতে বলেন, আমাদের দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হবে। এটা দিলে তোদের বিরুদ্ধে মামলা দেবনা বরং সুন্দরবনের প্রবেশ নিষিদ্ধ অভয়ারণ্যে প্রবেশ করে মাছ ধরতে দেব। তখন জেলেরা কাকুতি-মিনতি করে বলে, আমরা গরিব মানুষ, বাড়িতে বলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা দিতে পারবো। বনকর্মীরা এতে রাজি হয়ে জেলেদের বলে তোদের বাড়ির ফোন নাম্বার দে। তখন জেলেরা বাদীর দু’টি মেবাইল নাম্বার বনকর্মীদের কাছে দেন। 
মামলার আরজিতে বলা হয়, বনকর্মী মনিরুজ্জামান তার ব্যবহৃত মোবাইল থেকে বাদীর কাছে ফোন দিয়ে বলেন, জেলেদের আমরা আটকে রেখেছি। ৫০ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেব। মামলার বাদী আজিজুল ইসলাম জেলেদেরকে ছাড়িয়ে নিতে বনকর্মীদের চাঁদা দিতে সম্মত হলে বনকর্মী মনিরুজ্জামান তাকে নলীয়ান ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা তানজিলুর রহমানের সাথে কথা বলতে বলেন। জেলেদের ছাড়াতে আজিজুল ইসলাম বন কর্মকর্তা তানজিলুর রহমানের মুঠোফোনে কথা বললে তিনি একটি বিকাশ নাম্বার দিয়ে সেখানে টাকা পাঠাতে বলেন। তখন আজিজুল ইসলাম কয়রার পল­ীমঙ্গল গ্রামের ইয়াছিন গাজীর বিকাশের দোকানে গিয়ে তার এজেন্ট নাম্বার হতে তানজিলুর রহমানের দেয়া নাম্বারে সাত হাজার টাকা পাঠান। এরপর বোন কর্মকর্তা তানজিলুর রহমানের কাছে বাকি টাকা পরিশোধের জন্য কিছুটা সময় চান। 

মামলার আরজিতে বাদী আরও উলে­খ করেন, বন কর্মকর্তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা পুরোপুরি পরিশোধ না করায় তারা জেলেদের বেদম মারপিট করেন। জেলেদের জাল, নৌকা, মাছ ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এছাড়া জেলেদের শিকার করা আড়াইশ’ কেজি মাছের মধ্যে আদালতে মাত্র ৭০ কেজি মাছ জব্দের কথা উলে­খ করে বাকী মাছ বন কর্মকর্তারা বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। 

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সুন্দরবনের নলীয়ান ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা তানজিলুর রহমান বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মামলায় যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তা সত্য নয়। নিষিদ্ধ অভয়ারণ্যে টাকা নিয়ে কাউকে মাছ ধরার অনুমতি দেওয়াার সুযোগ নেই। মূলত: বিষ দিয়ে মাছ ধরতে দিই না বলেই অপরাধপ্রবণ জেলেরা মিথ্যা অভিযোগ করে। শুনেছি আদালতে মামলা হয়েছে। আদালত বিষয়টি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আইনগতভাবেই সবকিছু মোকাবিলা করব।
0 Comments