খুলনা নগরীর ফারাজী পাড়া এলাকায় ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত পারিজাত ক্লিনিকে আমেনা বেগম (২৮) নামে এক গৃহবধূকে সিজার অপারেশন করার সময় এনেসথেসিয়া চিকিৎসকে না ডেকে (ক্লিনিকের মালিক) গাইনী ডাক্তার নিজেই রোগীকে এনেসথেসিয়া ইনজেকশন পুশ করেন। এবং অ্যানেসথেসিয়ার অতিরিক্ত ডোজের কারণে গৃহবধূ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বুধবার দুপুরে নগরীর ফারাজী পাড়া এলাকায় ডাক্তার শাহানা রাজ্জাক পরিচালিত পারিজাত ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত আমেনা খাতুন (২৮) বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার দৈবহাটা সাইনবোর্ড এলাকার যশোহরদি গ্রামের সৌদি প্রবাসী শামীম কবিরের স্ত্রী।
স্বজনদের অভিযোগ, আগামী ২ জুন সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ থাকলেও সন্তানসম্ভবা আমেনা খাতুন কে আজ বুধবার সকালে ডাক্তার শাহানা রাজ্জাক পরিচালিত পারিজাত ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলেন। বেলা ১টার দিকে সিজারের জন্য তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় তাকে। কিছু সময় পর ভূমিষ্ঠ নবজাতককে তাদের কাছে দেয়া হয়।
তারা আরও জানান, অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও প্রসূতিকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হচ্ছিল না। এক পর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স যোগে প্রসূতিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করে। এসময় তারা বাধা দেন। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে গৃহবধূর এক নিকটাত্মীয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে স্বজনদের জানান যে আমেনা খাতুন মারা গেছেন।
স্বজনরা আরো অভিযোগ করেন, ডাক্তার শাহানা রাজ্জাক কোন এনেসথেসিয়া চিকিৎসককে না ডেকেই তিনি রোগীর সিজার অপারেশন করা শুরু করেন। তিনি নিজেই এনেসথেসিয়া ইনজেকশন রোগীর শরীরে পুশ করেন। এনেসথেসিয়া ইনজেকশনের মাত্রা বেশি দেওয়ার ফলে তাদের রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার শাহানা রাজ্জাক বলেন, মৃত আমেনা খাতুন দ্বিতীয় সন্তান সম্ভাবনা ছিল। এবং আগামী ২ জুন তার সম্ভাব্য তারিখ ছিল। কিন্তু যেহেতু তার দ্বিতীয় সিজার তাই তাকে ১৪ দিন পূর্বেই ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলা হয়েছিল। এবং আজকে সকাল ৯ টায় আমার ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করা হয়। সিজার অপারেশনের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
ক্লিনিকের গাইনি ডাক্তার শাহানা রাজ্জাকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনেসথেসিয়া চিকিৎসককে না ডেকে আমি নিজেই এনেসথেসিয়া ইনজেকশন দেওয়ার বিষয়টি আমার মারাত্মক ভুল হয়েছে। এনেসথেসিয়া চিকিৎসককে আমার ডাকা উচিত ছিল। আমি ভেবেছিলাম কোন সমস্যা হবে না। এর পূর্বেও আমি এরকম করেছি কোন সমস্যা হয়নি। তাই ভেবেছিলাম কোন সমস্যা হবে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা সদর থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম জানান, প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমি নিজেই গিয়েছিলাম। এছাড়া হাসপাতালটির মালিক ডাক্তার শাহানা রাজ্জাককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন এবং নিজেই অনুতপ্ত হন। তিনি তার ভুল স্বীকার করেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে মৃতের পরিবার থেকে কেউ অভিযোগ করেননি। তারা মৃতের লাশ নিয়ে চলে গেছেন। আমরা অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেছেন, গাইনি সিজারিয়ান অপারেশনের দুটি অপরিহার্য অংশের একটি হলো এনেসথেসিয়া ইনজেকশন দেয়া আর অন্যটি হলো সিজার করা। সেক্ষেত্রে এনেসথেসিয়া করা একটি অপরিহার্য বিষয় ছিল। যদি তিনি এনেস্থেসিয়া ডাক্তার না ডেকে নিজেই এনেস্থেসিয়া করে তবে তা মারাত্মক ভুল করেছেন। আমরা অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।